স্বদেশ ডেস্ক:
আসন্ন শিক্ষাবর্ষে (২০২০) প্রাক-প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সোয়া চার কোটির বেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৩৫ কোটির বেশি বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণের জন্য প্রস্তুত। আগামী ১ জানুয়ারি ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসবে’র দিন সারা দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর মধ্যে বিতরণের জন্য প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে গেছে এসব বই। আগামী ৩১ ডিসেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতীকীভাবে এ বই বিতরণ উদ্বোধন করবেন। এর পর দিন (১ জানুয়ারি) সারা দেশের শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেয়া হবে নতুন ঝকঝকে এসব পাঠ্যবই। ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর কাছে নতুন পাঠ্যবই পৌঁছে দিচ্ছে সরকার।
‘পাঠ্যপুস্তক উৎসবে’র জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় উৎসবের জন্য পৃথকভাবে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের বই বিতরণ উৎসব হবে এবার রাজধানীর বাইরে সাভারে। সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মূল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি ও উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। রাজধানীতে বিগত বছরগুলোতে যে প্রতিষ্ঠানে উৎসবের আয়োজন করা হতো ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অপারগতা জানানোর ফলে ব্যতিক্রমী আয়োজনের অংশ হিসেবে রাজধানীর বাইরে উৎসব আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। অপর দিকে প্রাথমিকের কেন্দ্রীয় পাঠ্যবই উৎসব হবে বিগত বছরগুলোর মতোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এখানে মূল অতিথি।
উভয় মন্ত্রণালয় থেকেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে ১ জানুয়ারি ‘পাঠ্যবই উৎসব’ আয়োজনের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে।
বই বিতরণের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা নয়া দিগন্তকে বলেন, সব বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছে গেছে এবং সেগুলো এখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণের অপেক্ষায় রয়েছে। কোনো ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ছিল না এবারের পাঠ্যবই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব কাজ শেষ করা গেছে এবার।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার সব পাঠ্যবই দেশীয় মুদ্রণকারীরাই ছাপিয়েছেন এবং টেন্ডারে বিদেশী প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও ছাপার কাজ পায়নি। যদিও এনসিটিবির প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের একটি অংশ বিদেশীদের ছাপার কাজ পাইয়ে দিতে নানা কৌশলে তৎপর ছিল।
এনসিটিবি সূত্রে পাওয়া তথ্যানুসারে, এবার ২০২০ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৩৫ কোটি ৩১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৫৪ কপি পাঠ্যবই ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের জন্য ৯ কোটি ৮৫ লাখ পাঁচ হাজার ৪৮০ কপি, মাধ্যমিক স্তরের জন্য ২৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ১৭৯ কপি বই ছাপা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর ৯৭ হাজার ৫৭২ জন শিশুর জন্য প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর জন্য পাঁচটি ভাষায় রচিত দুই লাখ ৩০ হাজার ১০৩ কপি বই ছাপানো হয়েছে। ইবতেদায়ি (মাদরাসার প্রাথমিক) স্তরের ৩২ লাখ ৬৯ হাজার ৭১৫ জন শিশুর জন্য দুই কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫ কপি বই ছাপানো হয়। সারা দেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ৭৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হয় ৯ হাজার ৫০৪টি বই। এর বাইরে কারিগরি স্তরের জন্য ১৬ লাখ তিন হাজার ৪১১ কপি বই, এসএসসি ভোকেশনালের জন্য ২৭ লাখ ছয় হাজার ২৮ কপি বই এবং দাখিল ভোকেশনাল স্তরের জন্য এক লাখ ৬৭ হাজার ৯৬৫ কপি বই ছাপানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা নতুন ক্লাসে উঠে ঝকঝকে বইয়ের গন্ধ নিতে নিতে আনন্দচিত্তে বাড়ি ফিরবে। তারা জানান, সব বই এবার দেশেই ছাপা হয়েছে। মাঝে কিছু সঙ্কট তৈরি হলেও মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে তার নিরসন হয়েছে। সারা দেশের প্রায় ৪০০ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যবই ছাপা, কাটিং ও বাইন্ডিংয়ের কাজ হয়েছে। বই ছাপতে ব্যবহার করা হয়েছে ৮৮ হাজার মেট্রিক টন কাগজ।